Friday 21 February 2020

৫ টি লাভজনক পাইকারি ব্যাবসা

লাভজনক_পাইকারী_ব্যাবসা
পাইকারী ব্যাবসার আইডিয়া
ব্যাবসার ক্ষেত্রে বলাই যায় যে "যত মূলধন তাতো লাভ। পকৃত পক্ষে ব্যাবসায় বিনিয়োগ বেশি হলে লাভের পরিমান বেশি হওয়া স্বাভাবিক। তবে আমাদের সবারই এই পাইকারি ব্যাবসা সম্পর্কে কম-বেশি ধারণা রয়েছে। ব্যাবসার ক্ষেত্রে পাইকার উৎপাদক ও খুচরা বিক্রেতার মাঝে সেতু বন্ধন সৃষ্টি করে

উৎপাদক  পাইকার  খুচরা বিক্রেতা  ভোক্তা



আশা করি বিষয়টা স্পষ্টভাবে একটা ধারণা পেয়েছেন। উৎপাদকের থেকে পাইকার সল্প দামে অনেক পণ্য কিনে গুদামজাতকরন করে বিভিন্ন সময় খুচরা বিক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী তা সরবরাহ করে। পাইকারি ব্যাবসা খুবই লাভজনক একটি ব্যবাসা, এই ব্যাবসায় যদি চোখ-কান খুলা রেখে সামনে এগিয়ে যান, তবে নিশ্চিত সাফল্যের মুখ দেখতে পারবেন।


তাই আজ আপনার সাথে এমন ১০ টি পাইকারি ব্যাবসার কথা বলব যা খুব কম ঝুকিপূর্ণ ও বেশি লাভজনক। এই ব্যাবসাগুলো  আপনি আগে থেকে জানেন, শুধু আবার করে একটু ধারনা দিতে চাই, আশা করি ভালো লাগবে। আর আপনাকে যেহেতু উৎপাদকের থেকে বেশি পরিমান পণ্য কিনতে হবে, তাই এই ব্যাবসায় বিনিয়োগের পরিমান বেশি, মোটামুটি ব্যাবসার ধরন বুঝে হাজার টাকা থাকে কোটি টাকাও হতে পারে। আপনি যে পাইকারি ব্যাবসাটি করতে চান,  সেটি মূলত নির্ভর করবে আপনার মূলধন আর এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্ঠার উপর।
পাইকারী চাউলের ব্যাবসা
পাইকারী চাউলের ব্যাবসা
১) পাইকারী চাউলের ব্যাবসা
চাউল এমন একটি পণ্য, যার চাহিদা বছরের ১২ মাসই থাকে আর থাকবেই বটে, কারন ভাত আমাদের দেশের প্রধান খাবার। তাই চাউলের পাইকারী ব্যাবসা অনেক লাভজনক একটি ব্যাবসা। মোটামোটি কিছু পণ্যের ব্যাবসা ছাড়া বেশিরভাগই মৌসুমি ব্যাবসা যা দেখা যায় বছরের একটা সময় মন্ধা যায়, আগেই বলেছি চাউলের ব্যাবসা একটি লাভজনক ব্যাবসা, সবসময় চাহিদা থাকার কারনে

#যেভাবে শুরু করবেন
 প্রাথমিক ধারনাঃ বিভিন্ন জাতের চাউল সম্পর্কে ভালোভাবে ধারনা নিতে হবে, আপনি দেখলেই যেনো বলতে পারেন এটি কোন চাউল। আপনার বাজারের পাইকারেরা প্রতি বস্তা কত টাকা দরে চাউল বিক্রি করছে, বা কত টাকা দরেই খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছে। আরো ভালোভাবে জানতে হবে, আপনার আশে-পাশে কেমন আয়ের মানুষ বাস করে, তার কি ধরনের চাউল খায়।

চাউলের পাইকারী ব্যাবসা শুরু করার আগে ভালো ভাবে স্থান নির্বাচন করতে হবে। মোটামোটি ভাবে মূলধনের পরিমান ১০ লাখ টাকা হলেই ভালোভাবে এই চাউলের পাইকারী ব্যাবসা শুরু করতে পারবেন।

আরো দেখুনঃ কিভাবে ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠান এর স্থান নির্বাচন করবেন?

ক) প্রথমেই আপনাকে একটি চাউলের মিল মালিক এর সাথে কথা বলে চাল কিনে, নিজ খরচে প্রসেসিং মিলে চাল পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে ভাঙ্গা চাউল আলাদা ও আরো অনুঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

খ) বাজারজাত করার জন্য চাউলের বস্তা কিনে, চাউল মেপে বস্তায় ভরতে হবে।

গ) তারপর ট্রাকে করে আপনার প্রতিষ্ঠানে মজুত করতে হবে।

বিঃদ্রঃ এক ট্রাক চাউলের বস্তা আনুমানিক ৯ লাখ টাকার মতো পড়বে, ৩০ বস্তা আনলে ট্রাকের যে যাতায়াত ভাড়া পড়বে, ১ ট্রাক আনলেও সেই পরিমান টাকাই খরচ হবে। আর অল্প মুলধন দিয়ে শুরু করলে মোটামোটি ভাবে ১-২ লাখ টাকায় ৫০-১০০ বস্তা চাউল পেয়ে যাবেন।


আরো দেখুনঃ একনজের ঢাকার পাইকারী বাজারগুলো।
কাপড়ের পাইকারী ব্যাবসা
কাপড়ের পাইকারী ব্যাবসা


২) কাপড়ের পাইকারী ব্যাবসা
কাপড়ের পাইকারী ব্যাবসা যেমন লাভজনক তেমন সেন্সেটিভ একটি ব্যাবসা। তাই এই ব্যাবসায় নামার আগে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের কাপড় সম্পর্কে ভালো ধারনা নিতে হবে। ৫-১০ লাখ টাকার ভিতরেই এই ব্যাবসা শুরু করতে পারেন।
যে যে কাজগুলো আপনাকে করতে হবেঃ

ক) বাজার গবেষণা করে দেখতে হবে, আপনার কাঙ্গিত বাজারে কি ধরনের কাপড়ের চাহিদা বেশি।

খ) কেমন দামে তা কেনা বেচা হচ্ছে।

গ) উৎপাদকের কাছ থেকে কাপড় এনে মজুদ করন করা।

ঘ) পণ্যের গুনগুত মান নিশ্চিত করা।

ঙ) খুচরা দোকান মালিকদের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা।

বিঃদ্রঃ আপনি যদি নিষ্ঠার সাথে, পণ্যের গুনগত মান ঠিক রেখে ব্যাবসা চালিয়ে যান, তবে প্রাথমিক অবস্থায় বাজারের অন্যান্য পাইকারের মতো খুব বেশি লাভ করতে  না পারলেও ১-২ বছরের মধ্যেই আপনি আপনার ব্যাবসা থেকে অনেক লাভবান হতে পারবেন। শুধু তাই না, এর পাশাপাশি অনলাইনে ষ্টোর খুলেও আপনার পাইকারী ব্যাবসা পরিচানলা করতে পারেন।



ব্যাগের পাইকারী ব্যাবসা
ব্যাগের পাইকারী ব্যাবসা

৩) ব্যাগের পাইকারী ব্যাবসাঃ
এই ব্যাবসার নাম শুনে মনে হচ্ছে খুব ছোট পুজির ব্যাবসা তাই না, আসলে ঠিক তেমন টা না। এটি আগের গুলোর মতো খুব ভালো লাভজনক একটি ব্যাবসা। বর্তমানে না শুধু এই ব্যাগের চাহিদা অনেক আগেও ছিলো এখনো আছে এবং ভবিষৎতে  থাকবে। বর্তমান সময়ে এই ব্যাগের ব্যাবহারকারী নারী-পুরুষ উভয়েই। যেভাবে এই পাইকারী ব্যাবসায় সফলতা আনতে পারবেন। ৪-৫ লাখ টাকার মধ্যে এই ব্যাবসা শুরু করতে পারেন।

ক) প্রথমেই আপনাকে বিভিন্ন যায়গায় ঘুরতে হবে, উৎপাদকদের সাথে পরিচিত হতে হবে।

খ) কি ধরনের ব্যাগ সময়ের সাথে বেশি চলছে, কোনটি খুব বেশি ষ্টাইলিষ্ট প্রডাক্ট।

গ) সেম্পল সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রেতাদের নিকট দেখাতে হবে।

বিঃদ্রঃ এটি খুব লাভজনক একটি পাইকারী ব্যাবসা, আপনি যদি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিত্য-নতুন আপডেট পণ্য খচরা বিক্রেতাদের সরবরাহ করতে পারেন তবে প্রচুর টাকা আয় করতে পারবেন। স্কুল, কলেজ বা ব্যাক্তি জিবনে সাবারই এই পন্যের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয়।

৪) টি-শার্টে ব্যাবসাঃ
টি শার্টের পাইকারী  ব্যাবসা লাভজনক বটে শুধু তাই না, এই ব্যাবসা মন দিয়ে করতে পারলে আপনি নিজেই টি-শার্ট তৈরি করার প্রতিষ্ঠান এর মালিক হয়ে যেতে পারবেন, এটি আপনার মন রক্ষা করতে বলছি না। এই ব্যাবসা টি কম পুঁজিতেও শুরু করতে পারবেন। আপনার আশেপাশে বা বাংলাদেশের অনেক যায়গায় টি-শার্ট তৈরির কারখানা রয়েছে, যেখানে থেকে স্বল্প মূল্যে ভালো কোয়ালিটির টি-শার্ট পাবেন, এইখান ত্থেকে পাইকারী দরে টি-শার্ট কিনে, আপনি আপনার ব্যাবসা শুরু করতে পারেন, কিনে আনার আগে আপনি কারখানা থেকে সেম্পল এনে দেখিয়ে স্থানীয় বাজারের চাহিদা অনুযায়ীও সাপ্লাই দিতে পারেন, এতে মাল ঘরে পড়ে থাকবে না।



কসমেটিক এর পাইকারী ব্যাবসা
কসমেটিক এর পাইকারী ব্যাবসা


৫) কসমেটিক এর পাইকারী ব্যাবসাঃ

কসমেটিক এর পাইকারি ব্যাবসা মোটামোটিভাবে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়েই শুরু করতে পারবেন। এই ব্যাবসা গুলো অনেক কমন ব্যাবসা, তাই আপনাকে এই ব্যাবসাগুলো করতে হলে অনেক কিছু মাথায় রেখে করতে হবে। কসমেটিক ব্যাবসায় আপনি ২৫% থেকে ৬০% পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন কোন কোন ক্ষেত্র বিশেষ। আগের ব্যাবসাগুলোর মতোই এই ব্যাবসা একটি চলমান ব্যাবসা তাই ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে, এই ব্যাবসা পণ্যে নির্বাচন করতে হবে। কোন কিছু চিন্তা না করে হুট-হাট পণ্য আনা যাবে না। এমন পণ্য যদি আনেন যেটি খুব কম চলে, সে পণ্য আপনাকে ছাড় করতে হলে অনেক বেশি সময় লাগবে, আর টাকাও আটকে থাকবে, যা একজন ব্যাবসায়ীর কাছে খুব ভালো সংবাদ না। আর এই কসমেটিক ব্যাবসায় নিত্য-নতুন ডিজাইন এর কদর অনেক বেশি, আর বাজারেও পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন আপডেট মাল আসছে। তাই এই ব্যাবসা অনেক লাভজনক, বাজার গবেষণার মাধ্যমে এই ব্যাবসায় খুব অল্পদিনেই সাফল্য পাওয়া যায়।



পরিশেষে কিছু কথাঃ পাইকারী ব্যাবসা ১০-১২ হাজার টাকার ব্যাবসা না। প্রতিটা ব্যাবসায় যেমন লাভ রয়েছে তেমন লোকসান নামটিও রয়েছে, আর পাইকারী ব্যাবসায় লোকসান হও্য়া মানে বহু টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া, আর এই ক্ষতি এড়াতে দীর্ঘ ও সুষ্ঠ পরিকল্পনার বিকল্প দ্বিতীয় কিছু নেই। সকলের সুস্থতা আর ব্যাবসায় সফলতা কামনা করে এখানেই শেষ করলাম।

Labels: ,

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home